সোমবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

গণতন্ত্রের ফাসি

গণতন্ত্রের ফাসি 



শিরোনামটি পড়ে কি আপনি কি যারপরনাই বিরক্ত? আপনি কি নূর হোসেনের অম্লান কৃতিত্বের প্রতি কালিমা লেপনের শংকায় শংকিত?,আপনি কি পোস্টটিতে ভাদা বা ছাগু নামে গালি দিয়ে কোন মন্তব্য ইতিমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছেন? আপনি গালি দিতেই পারেন কিন্তু আমি তারপরও বলব গণতন্ত্র নিপাত যাক। আমি তারপরও চাইব গণতন্ত্রের ফাসি। 

স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ পূন:নির্মানে ব্যস্ত সরকারের কাছে কেও গণতন্ত্র প্রত্যাশা করেনি। সদ্য মুক্তির স্বাদ পাওয়া মানুষগুলোর চোখে তখন প্রিয় মাতৃভূমিকে স্বপ্ন দিয়ে সাজানোর বাসনা। কিন্তু সে যাত্রায় প্রথম হোচট আসে ৭৫’এ বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে। অনেকের মতে তা ছিল বাকশালীয় শাসন রুদ্ধ করার একমাত্র পথ। কিন্তু রক্তের স্বাদ পাওয়া নরপশু যে সবসময় শিকারের আশায় ওত পেতে থাকে তা আমরা বুঝতে পারি জিয়া হত্যাকান্ডের মাধ্যমে। এরপর শুরু হয় এরশাদের মিলিটারী কমান্ড। প্রায় এক দশকের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হয় ৯০ এর গণ আন্দোলনে- যে আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল বিপ্লবী নূর হোসেনের মৃত্যু। যার উদোম গায়ে ছিল স্বপ্ন তুলির আচড়- স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক।
হ্যা, আজ গণতন্ত্র খাচা থেকে মুক্তি পেয়েছে। আর সেই খাচায় বন্দী হয়েছি আমরা। আজ দেশের সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ কিন্তু ক্ষমতা ভোগীদের পাপাচারে আমরা অতিষ্ট। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দুই যুগ পর আজ যখন রিকশায় উঠে চল্লিশোর্ধ কোন রিকশাওলায়ার সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ জিজ্ঞেস করি- ‘চাচা, বলেন’তো কার সময়ে আপ্নারা সবচেয়ে শান্তিতে ছিলেন?’ তখন সে অতীত স্মৃতি হাতড়ে জলজল চোখে দৃপ্ত কন্ঠে বলে- ‘এরশাদ সাবের আমলে আমরা সবচে ভালা আসিলাম’ হতে পারে তখন মত প্রকাশের স্বাধীনতা অনেকটাই রহিত হয়েছিল, হতে পারে তখন সরকারী অফিসগুলো চলত পোষাকী বাহিনীর নির্দেশে, হতে পারে তখন দেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ড ছিলো নিষিদ্ধ। কিন্তু ছিল না আজকের মত দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতি, ছিল না ধংসাত্নক হরতালের রাজনীতি, ছিল না কোন লাশগুম করা বাহিনী। ৯০ এর পর গণতন্ত্র পেয়েছি। কিন্তু তা শুধুমাত্র একটি দিনের জন্য। প্রতি ৫ বছর পর পর আসা এ দিনটিতে আমরা ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচিত করি আমাদের পরবর্তী প্রভু। 

আব্রাহাম লিংকনের মতে ব্যালট নাকি বুলেটের চেয়েও শক্তিশালী। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যালটযুদ্ধে বুলেট ভর্তি পিস্তল কার হাতে থাকবে তা নির্ধারিত হয়। আর সেই ক্ষমতা পেয়ে পাপিষ্ঠ প্রভু গুলি হত্যা করে কলেজ ছাত্র আবিরকে, পা কেটে নেয় লিমনের আর স্বদেশীয় প্রভুর নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে ভীনদেশী দেবতা ফেলানীর মৃত্যু নিশ্চিত করে কাটাতারে ঝুলিয়ে। 

আজ গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় হরতালের নামে আমার গাড়ি ভাঙ্গা হয়, কিন্তু প্রাণভয়ে আমি কিছু বলতে পারি না। আজ গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চায় কড়া হরতাল পালনের পরিবেশ সৃষ্টিতে বাসে আগুন লাগায়, কিন্তু আমি প্রতিবাদ করতে পারি না। আজ আমার দেশের গ্যাস বাইরে রপ্তানীর ষড়যন্ত্র হয়, কিন্তু আমি সেই চুক্তি দেখতে পারি না। এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক কূট কৌশলে আমজনতা আজ মূক, বধির আর অন্ধ।

হে সূর্যসেন, আজ তোমার স্বাধীনতা এসেছে কিন্তু মুক্তি আসেনি। হে প্রীতিলতা আজ ভীনদেশী প্রভুরা বিদায় নিয়েছে কিন্তু রক্ত চুষছে দেশীয় দেবতা। হে নূর হোসেন, আজ তোমার গণতন্ত্র এসেছে কিন্তু মুখোশের আড়ালে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে স্বৈরাচারী পরিবারতন্ত্র। যে স্বাধীনতায় আমার ক্ষুদা কমে না তা আমার কাছে মূল্যহীন, যে প্রভুত্ব আমার দুঃখ দূর করে না তার পূজা আমার কাছে অর্থহীন, যে গণতন্ত্র আমার উপর চালায় অত্যাচারের ষ্টিমরোলার তা আমার কাছে অথর্ব। 

আমি চাই সত্যিকারের স্বাধীনতা, আমি চাই প্রজাদরদী প্রভু, আমি চাই নাগরিক অধিকার নিশ্চিতের গণতন্ত্র। কিন্তু আজ গণতন্ত্রের মুখোশে স্রেফ ক্ষমতালোভে যে পারিবারিক শাসনতন্ত্র চলছে-আমি তার ফাসি চাই……….নূর হোসেন, আমায় ক্ষমা করো। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন