শাহবাগে নেতৃত্ব দানকারী যারা -৪
ধর্মদ্রোহী নষ্ট তরুণের প্রতিকৃতি ব্লগার রাজীব : হত্যাকাণ্ডের রাতে তানজিলা ছিল রাজীবের বাসায়
প্রচণ্ড ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে তার গার্লফ্রেন্ড তানজিলা। তিন মাস ধরে স্ত্রী বাসন্তী ওরফে অনিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না রাজীবের। স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে নিয়েই থাকত রাজীব। তানজিলা ছাড়াও আরেক প্রেমিকা রাফির সঙ্গেও অবাধ মেলামেশার তথ্য পাওয়া গেছে রাজীবের আত্মীয় ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। ঘটনার দিন রাজীবের বাসাতেই ছিল তানজিলা। পুলিশ তানজিলাকে দু’কক্ষের রাজীবের মা নার্গিস হায়দারের বাসা থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই বাসায় প্রচুর মদের বোতল ও নেশার উপকরণ পাওয়া গেছে। রাজীব হত্যা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে গতকাল পল্লবী থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন পল্লবীর পলাশনগর ১১ নম্বর রোডের রাজীবের মায়ের বাসা গিয়ে দেখা গেছে, পল্লবী থানার দুইজন পুলিশ বাসাটি পাহারা দিচ্ছেন। বাসায় অন্য কোনো লোক নেই। রাজীব যে কক্ষটিতে থাকতো সেটি তালাবদ্ধ। অন্য একটি কক্ষে রয়েছে অসংখ্য মদের বোতল। কোনোটিতে মদ ভর্তি, কোনোটিতে অর্ধেক, আবার কোনোটি খালি। কর্তব্যরত পুলিশের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘পল্লবী থানা থেকে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা কিছু বলতে পারব না, থানায় গেলেই সবকিছু জানতে পারবেন।’ বাড়ির কাছেই মাত্র ১শ’ গজের মধ্যে রেজা কিডস কেয়ার স্কুলের সামনে চায়ের দোকানের মালিক ইউনুস এবং দোকানে থাকা এলাকাবাসী জানান, ওই বাসায় রাজীব ও নোবেল নামে দুই ভাই থাকত। এরা এলাকাবাসীর সঙ্গে কখনও মেলামেশা করত না। তবে মাঝে মধ্যেই রাজীবের সঙ্গে একাধিক মেয়েকে দেখা যেত। মেয়েরা ওই বাসায়ও থেকেছে। ঘটনার দিনও রাজীবের সঙ্গে তারা মেয়ে দেখেছেন। তবে তাকে নিয়ে কোনো দোকানে চা খেতে দেখেননি বলেও জানিয়েছেন তারা।
পল্লবী থানা পুলিশ জানিয়েছে, রাজীবের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তার বাবা নাজিমউদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার প্রেক্ষিতেই ঘটনার পরপরই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে রাজীবের খালাতো ভাই এবং ভাই নোবেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই রাজীবের গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে থানার ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন ও অন্য পুলিশ অফিসাররা জানান, তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতারের ১৫ মিনিটের মধ্যেই ডিবি পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে। বর্তমানে তারা ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছে। আপনারা সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিন’।
উচ্ছৃঙ্খলতা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ : গতকাল ব্লগার রাজীবের শ্বশুরের পুরান ঢাকার আনন্দ বেকারি, পল্লবী থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, রাজীবের পলাশনগর বাসার লোক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তার ধর্মদ্রোহী, উচ্ছৃঙ্খলতাসহ নানা অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে।
পুরান ঢাকার আবুল হাসনাত রোডের প্রসিদ্ধ আনন্দ বেকারির মালিক আবদুর রশীদ ব্লগার রাজীবের শ্বশুর। আবদুর রশীদের ছোট মেয়ে আনিকার সঙ্গে দুই বছর রাজীবের বিয়ে হয়। অনিকার ডাক নাম ছিল বাসন্তী। আনন্দ বেকারির শোরুমে বসেই দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১২টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাত্কারে রাজীবের উচ্ছৃঙ্খলতা ও ধর্মদ্রোহিতার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন তিনি। বিয়ের পর থেকেই ধানমন্ডি ৪ নম্বর রোডের ২১/১, বাড়ির ২/সি ফ্ল্যাটের মালিক আবদুর রশীদের আপ্যার্টমেন্টে রাজিব থাকত।
আব্দুর রশীদ জানান, একটু বেশি অস্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্যই তার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া হতো। তিন মাস ধরে তার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ হলে রাজীবকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর তিনি কিংবা তার মেয়ে রাজীবের খোঁজ-খবর নেয়নি। আবদুর রশীদ দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ‘বিয়ের পর সব মেয়েই সুস্থ জীবন চায়। আমার মেয়েও সুস্থ জীবন চেয়েছিল। আর তা হয়নি বলেই তারা তিন মাস ধরে আলাদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাত ১১টায় টেলিভিশনে সংবাদ দেখে তারা রাজীবের বাবাকে ফোন করে নিশ্চিত ঘটনা জানতে পারেন। পরে তিনি তার দুই ভাইকে নিয়ে পল্লবী থানায় ছুটে যান। থানায় গিয়ে দেখেন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তারা নোবেল এবং রাজীবের খালাতো ভাই গালিবকে উপরে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ সময় তিনি পুলিশের কাছ থেকে তানজিলার নাম জানতে পেরেছেন। আবদুর রশীদ বলেন, ‘খুন হয়েছে এটা সত্য। তবে তা উদঘাটনের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সত্য ঘটনা আজ হোক কাল হোক বের হবেই। তাই আমি না জেনে সে জামায়াত ইসলামী হোক আর যেই হোক কারও ওপর দোষ চাপাতে পারব না’। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার নামী এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আনন্দ বেকারির শোরুমের দেয়ালে মসজিদের ছবি লাগানো। তিনি বলেন, রাজীব যে ধর্মদ্রোহী কাজ করত তা তাদের জানা ছিল না।
খুনের কারণ তানজিলা : পল্লবী থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের মামলা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, ব্লগার রাজীব খুনের কারণ তানজিলাসহ একাধিক প্রেমিকা। ঘটনার রাতে রাজীবের বাসায়ই তানজিলা ছিল বলে নিশ্চিত করেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ জানায়, খুনের সময় তানজিলা রাজীবের বাসায় ছিল। সেদিন তানজিলার ওই বাসাতেই থাকার কথা ছিল। পল্লবী থানা পুলিশ রাজীবের খালাতো ভাই এবং আপন ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে রাজীবের বাসা থেকেই তানজিলাকে গ্রেফতার করে বলেও জানায় পুলিশ। তানজিলাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কথায় গরমিল পাওয়া গেছে। এমনকি তানজিলার দেয়া মিরপুর পলাশনগরের ১৩ নম্বর রোডের কবরস্থানের পাশে বোনের বাসার ঠিকানারও অস্তিত্ব ও পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। তবে তানজিলাসহ আরও অনেক মেয়ে ওই বাসায় রাতযাপন করতো বলেও জানায় পুলিশ। পুলিশের তদন্তে রাজীবের একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া, লিভ-টুগেদারের বিষয়গুলো চলে আসে। অন্যদিকে তানিজলার বাসার ঠিকানার জন্য পল্লবী থানায় গেলে ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন জানান, তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতারের মাত্র ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই ডিবি পুলিশ নিয়ে যায়। তাই সাধারণ ডায়রি বা থানার কোনো নথিপত্রে তাদের গ্রেফতারের কাগজপত্র নেই। রাজীব হত্যা মামলার আইও মতিয়ার রহমান ফোনে দৈনিক আমার দেশকে জানান, ডিবি পুলিশ নিয়েছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। মতিয়ার রহমান ব্যস্ত আছি বলে আর কথা বলতে চাননি।
রাজীবের বাসা ও এলাকায় ঘুরে যে চিত্র পাওয়া গেল : পলাশনগর ১১ নম্বর রোডের ৫৬/৩ নম্বর বাড়িটি রাজীবের মা নার্গিস হায়দারের নামে। একতলা এ ভবনের সামনে ও পেছনে বেশ কিছু খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে কয়েকটি বড় গাছপালাও রয়েছে। চারপাশে দেয়ালে ঘেরা বাড়িটির ভেতরটা বাইরে থেকে দেখা যায় না। ভেতরে দু’কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটিতে ঢুকে দেখা যায় পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। সামনের এক চিলতে বারান্দায় সব জুতো পুরুষের। সার্বক্ষণিক নারীদের থাকার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। খোলা রুমে কিংবা বারান্দায়। তালাবদ্ধ রুমে রাজিব থাকত বলে জানায় দায়িত্বরত পুলিশ। তবে বারান্দা ও খোলা কক্ষে প্রচুর মদের বোতল দেখা গেছে। এলাকাবাসী ও চায়ের দোকানদাররা জানান, গত তিন চার বছরে অনেক মেয়েকে এ বাড়িতে আসতে দেখেছেন তারা। নাম প্রকাশ করতে চাননি এমন কয়েকজন বলেন, বউ আসবে কি করে, এখানে তো নার্গিস আক্তার কখনও থাকেন না। তবে রাজীবের বউ এখানে কখনও আসেননি সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করেন তারা। সামনের ছোট গলিতে ভাড়া বাসায় থাকা এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, বাড়ির গেটে তালাবদ্ধ রেখে তারা বাড়ির ভেতরেই থাকত। এক চা দোকানি বলেন, ‘এখানে দাঁড়িয়ে রাজীব সিগারেট খেত না। সিগারেট নিয়ে সোজা বাসায় চলে যেত’।
http:// www.amardeshonline.com/ pages/details/2013/02/19/ 188595#.USJ7F_L6mds
— =====================================================================ধর্মদ্রোহী নষ্ট তরুণের প্রতিকৃতি ব্লগার রাজীব : হত্যাকাণ্ডের রাতে তানজিলা ছিল রাজীবের বাসায়
প্রচণ্ড ইসলামবিদ্বেষী ব্লগার রাজীব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে তার গার্লফ্রেন্ড তানজিলা। তিন মাস ধরে স্ত্রী বাসন্তী ওরফে অনিকার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না রাজীবের। স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে নিয়েই থাকত রাজীব। তানজিলা ছাড়াও আরেক প্রেমিকা রাফির সঙ্গেও অবাধ মেলামেশার তথ্য পাওয়া গেছে রাজীবের আত্মীয় ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলে। ঘটনার দিন রাজীবের বাসাতেই ছিল তানজিলা। পুলিশ তানজিলাকে দু’কক্ষের রাজীবের মা নার্গিস হায়দারের বাসা থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। ওই বাসায় প্রচুর মদের বোতল ও নেশার উপকরণ পাওয়া গেছে। রাজীব হত্যা সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে গতকাল পল্লবী থানা পুলিশ ও এলাকাবাসী আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন।
গতকাল দুপুরে সরেজমিন পল্লবীর পলাশনগর ১১ নম্বর রোডের রাজীবের মায়ের বাসা গিয়ে দেখা গেছে, পল্লবী থানার দুইজন পুলিশ বাসাটি পাহারা দিচ্ছেন। বাসায় অন্য কোনো লোক নেই। রাজীব যে কক্ষটিতে থাকতো সেটি তালাবদ্ধ। অন্য একটি কক্ষে রয়েছে অসংখ্য মদের বোতল। কোনোটিতে মদ ভর্তি, কোনোটিতে অর্ধেক, আবার কোনোটি খালি। কর্তব্যরত পুলিশের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘পল্লবী থানা থেকে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরা কিছু বলতে পারব না, থানায় গেলেই সবকিছু জানতে পারবেন।’ বাড়ির কাছেই মাত্র ১শ’ গজের মধ্যে রেজা কিডস কেয়ার স্কুলের সামনে চায়ের দোকানের মালিক ইউনুস এবং দোকানে থাকা এলাকাবাসী জানান, ওই বাসায় রাজীব ও নোবেল নামে দুই ভাই থাকত। এরা এলাকাবাসীর সঙ্গে কখনও মেলামেশা করত না। তবে মাঝে মধ্যেই রাজীবের সঙ্গে একাধিক মেয়েকে দেখা যেত। মেয়েরা ওই বাসায়ও থেকেছে। ঘটনার দিনও রাজীবের সঙ্গে তারা মেয়ে দেখেছেন। তবে তাকে নিয়ে কোনো দোকানে চা খেতে দেখেননি বলেও জানিয়েছেন তারা।
পল্লবী থানা পুলিশ জানিয়েছে, রাজীবের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তার বাবা নাজিমউদ্দিন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলার প্রেক্ষিতেই ঘটনার পরপরই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে রাজীবের খালাতো ভাই এবং ভাই নোবেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই রাজীবের গার্লফ্রেন্ড তানজিলাকে গ্রেফতার করা হয়। এদিকে তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে থানার ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন ও অন্য পুলিশ অফিসাররা জানান, তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতারের ১৫ মিনিটের মধ্যেই ডিবি পুলিশ তাদের নিয়ে গেছে। বর্তমানে তারা ডিবি পুলিশের কাছে রয়েছে। আপনারা সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিন’।
উচ্ছৃঙ্খলতা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির অভিযোগ : গতকাল ব্লগার রাজীবের শ্বশুরের পুরান ঢাকার আনন্দ বেকারি, পল্লবী থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ, রাজীবের পলাশনগর বাসার লোক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে তার ধর্মদ্রোহী, উচ্ছৃঙ্খলতাসহ নানা অপকর্মের তথ্য পাওয়া গেছে।
পুরান ঢাকার আবুল হাসনাত রোডের প্রসিদ্ধ আনন্দ বেকারির মালিক আবদুর রশীদ ব্লগার রাজীবের শ্বশুর। আবদুর রশীদের ছোট মেয়ে আনিকার সঙ্গে দুই বছর রাজীবের বিয়ে হয়। অনিকার ডাক নাম ছিল বাসন্তী। আনন্দ বেকারির শোরুমে বসেই দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১২টা ৫৩ মিনিট পর্যন্ত দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাত্কারে রাজীবের উচ্ছৃঙ্খলতা ও ধর্মদ্রোহিতার বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন তিনি। বিয়ের পর থেকেই ধানমন্ডি ৪ নম্বর রোডের ২১/১, বাড়ির ২/সি ফ্ল্যাটের মালিক আবদুর রশীদের আপ্যার্টমেন্টে রাজিব থাকত।
আব্দুর রশীদ জানান, একটু বেশি অস্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্যই তার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া হতো। তিন মাস ধরে তার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ হলে রাজীবকে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর তিনি কিংবা তার মেয়ে রাজীবের খোঁজ-খবর নেয়নি। আবদুর রশীদ দৈনিক আমার দেশকে বলেন, ‘বিয়ের পর সব মেয়েই সুস্থ জীবন চায়। আমার মেয়েও সুস্থ জীবন চেয়েছিল। আর তা হয়নি বলেই তারা তিন মাস ধরে আলাদা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাত ১১টায় টেলিভিশনে সংবাদ দেখে তারা রাজীবের বাবাকে ফোন করে নিশ্চিত ঘটনা জানতে পারেন। পরে তিনি তার দুই ভাইকে নিয়ে পল্লবী থানায় ছুটে যান। থানায় গিয়ে দেখেন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তারা নোবেল এবং রাজীবের খালাতো ভাই গালিবকে উপরে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ সময় তিনি পুলিশের কাছ থেকে তানজিলার নাম জানতে পেরেছেন। আবদুর রশীদ বলেন, ‘খুন হয়েছে এটা সত্য। তবে তা উদঘাটনের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। সত্য ঘটনা আজ হোক কাল হোক বের হবেই। তাই আমি না জেনে সে জামায়াত ইসলামী হোক আর যেই হোক কারও ওপর দোষ চাপাতে পারব না’। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরান ঢাকার নামী এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আনন্দ বেকারির শোরুমের দেয়ালে মসজিদের ছবি লাগানো। তিনি বলেন, রাজীব যে ধর্মদ্রোহী কাজ করত তা তাদের জানা ছিল না।
খুনের কারণ তানজিলা : পল্লবী থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের মামলা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানায়, ব্লগার রাজীব খুনের কারণ তানজিলাসহ একাধিক প্রেমিকা। ঘটনার রাতে রাজীবের বাসায়ই তানজিলা ছিল বলে নিশ্চিত করেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশ জানায়, খুনের সময় তানজিলা রাজীবের বাসায় ছিল। সেদিন তানজিলার ওই বাসাতেই থাকার কথা ছিল। পল্লবী থানা পুলিশ রাজীবের খালাতো ভাই এবং আপন ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে রাজীবের বাসা থেকেই তানজিলাকে গ্রেফতার করে বলেও জানায় পুলিশ। তানজিলাকে জিজ্ঞাসাবাদে তার কথায় গরমিল পাওয়া গেছে। এমনকি তানজিলার দেয়া মিরপুর পলাশনগরের ১৩ নম্বর রোডের কবরস্থানের পাশে বোনের বাসার ঠিকানারও অস্তিত্ব ও পাওয়া যায়নি বলে জানায় পুলিশ। তবে তানজিলাসহ আরও অনেক মেয়ে ওই বাসায় রাতযাপন করতো বলেও জানায় পুলিশ। পুলিশের তদন্তে রাজীবের একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়া, লিভ-টুগেদারের বিষয়গুলো চলে আসে। অন্যদিকে তানিজলার বাসার ঠিকানার জন্য পল্লবী থানায় গেলে ডিউটি অফিসার আবুল হোসেন জানান, তানজিলা ও রাফিকে গ্রেফতারের মাত্র ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই ডিবি পুলিশ নিয়ে যায়। তাই সাধারণ ডায়রি বা থানার কোনো নথিপত্রে তাদের গ্রেফতারের কাগজপত্র নেই। রাজীব হত্যা মামলার আইও মতিয়ার রহমান ফোনে দৈনিক আমার দেশকে জানান, ডিবি পুলিশ নিয়েছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। মতিয়ার রহমান ব্যস্ত আছি বলে আর কথা বলতে চাননি।
রাজীবের বাসা ও এলাকায় ঘুরে যে চিত্র পাওয়া গেল : পলাশনগর ১১ নম্বর রোডের ৫৬/৩ নম্বর বাড়িটি রাজীবের মা নার্গিস হায়দারের নামে। একতলা এ ভবনের সামনে ও পেছনে বেশ কিছু খালি জায়গা রয়েছে। সেখানে কয়েকটি বড় গাছপালাও রয়েছে। চারপাশে দেয়ালে ঘেরা বাড়িটির ভেতরটা বাইরে থেকে দেখা যায় না। ভেতরে দু’কক্ষবিশিষ্ট বাড়িটিতে ঢুকে দেখা যায় পুলিশ পাহারা দিচ্ছে। সামনের এক চিলতে বারান্দায় সব জুতো পুরুষের। সার্বক্ষণিক নারীদের থাকার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। খোলা রুমে কিংবা বারান্দায়। তালাবদ্ধ রুমে রাজিব থাকত বলে জানায় দায়িত্বরত পুলিশ। তবে বারান্দা ও খোলা কক্ষে প্রচুর মদের বোতল দেখা গেছে। এলাকাবাসী ও চায়ের দোকানদাররা জানান, গত তিন চার বছরে অনেক মেয়েকে এ বাড়িতে আসতে দেখেছেন তারা। নাম প্রকাশ করতে চাননি এমন কয়েকজন বলেন, বউ আসবে কি করে, এখানে তো নার্গিস আক্তার কখনও থাকেন না। তবে রাজীবের বউ এখানে কখনও আসেননি সে ব্যাপারটিও নিশ্চিত করেন তারা। সামনের ছোট গলিতে ভাড়া বাসায় থাকা এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, বাড়ির গেটে তালাবদ্ধ রেখে তারা বাড়ির ভেতরেই থাকত। এক চা দোকানি বলেন, ‘এখানে দাঁড়িয়ে রাজীব সিগারেট খেত না। সিগারেট নিয়ে সোজা বাসায় চলে যেত’।
http://
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন