রাজীবের ইসলামবিরোধী অপপ্রচারে দেশজুড়ে ক্ষোভ ধিক্কার
রাসূল (সা:), নবী সহধর্মিণী ও সাহাবাদের সম্পর্কে জঘন্য কল্পকাহিনী
নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শুভ ওরফে ‘থাবা বাবা’র ইসলামবিরোধী অপপ্রচারে দেশজুড়ে উঠেছে নিন্দা ও ধিক্কারের ঝড়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:, পবিত্র কুরআন, ইসলাম ধর্ম ও ইসলামের রীতিনীতি নিয়ে যেসব মিথ্যা, বানোয়াট, অশ্লীল ও উদ্ভট কল্পকাহিনী রাজীব তার ব্লগে তুলে ধরে দীর্ঘ দিন থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করার যে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল, গতকাল তা সাইবার মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়ে যায়। আর এর মধ্য দিয়ে সব রাজনৈতিক মতধারায় বিশ্বাসী প্রতিটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হেনেছে। শুধু তা-ই নয়, অপপ্রচারের জন্য বিশ্বব্যাপী ধিকৃত সালমান রুশদীকেও হার মানিয়েছে রাজীব। এত বড় দুঃসাহস কেউ কখনো করেনি।
ফলে এক দিন আগেও যে রাজীব তরুণ প্রজন্ম ও সরকারের কাছে ‘প্রজন্মের প্রথম শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, মুহূর্তের মধ্যেই জীবদ্দশায় কৃতকর্মের ফলস্বরূপ সে পেতে শুরু করেছে দেশবাসীসহ বিশ্বের মুসলমানদের ধিক্কার ও ঘৃণা। রাজীবের ব্লগের বক্তব্য প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় সারা দেশে প্রতিটি মুসলমান নারী-পুরুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভের আগুন। শুধু তা-ই নয়, দাবি উঠতে শুরু করেছেÑ যারা আল্লাহ, রাসূল সা: ও ইসলামের বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম মন্তব্যকারী রাজীবকে ‘শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন, শাহবাগে নামাজে জানাজার নামে মায়াকান্না কাঁদলেন- তাদের বিচারের। এমনকি একজন নাস্তিকের নামাজে জানাজা, জানাজার প্রক্রিয়া ও অংশগ্রহণকারী নারী-পুরুষদের নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, শাহবাগ গণজাগরণ চত্বরে অবস্থানকারী ভদ্র মুসলিম পরিবারের সন্তানদের মাঝেও রাজীবের অতীত কৃতকর্মের খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশীরাও গতকাল সারা দিন ফোন ও ব্লগের মাধ্যমে রাজীবকে ধিক্কার ও ঘৃণা জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার রাতে মিরপুরে নিহত হন রাজীব। দুবৃত্তরা তাকে খুন করে। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও পুলিশ এ বিষয়ে খোলাসা করতে পারেনি। তবে শাহবাগ চত্বর থেকে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করা হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
থাবা বাবা তার ব্লগ পেজ ‘নূরানী চাপা সমগ্র’তে মহানবী মুহাম্মাদ সা:কে যে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তার জীবন সম্পর্কে এবং তাকে হেয় করে যে মিথ্যা কল্পকাহিনী রচনা করেছেন তাতে সাধারণ মানুষ খুবই আহত হয়েছেন। নবী সা:-এর নবুয়াতপ্রাপ্তির স্মৃতিবিজড়িত হেরা গুহা নিয়ে তার বিশ্লেষণ কোনোভাবেই শালীনতার মধ্যে পড়ে না। নবী মুহাম্মাদ সা:কে বরাবরই ‘মোহাম্মক’ (নাউজুবিল্লাহ) বলে সম্বোধন করেছেন থাবা বাবা।
মুসলমানের ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ও অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। যেখানে মুসলমানেরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করার জন্য এক মাস সিয়াম সাধনা করেন; সাধনার পর যে ঈদ আসে সেটিকে কটাক্ষ করে যৌনতার প্রসঙ্গ টেনে বিদ্রুপ করা হয়েছে- যা প্রকাশযোগ্য নয় বলে মনে করে নয়া দিগন্ত।
নবী সা:-এর স্ত্রী উম্মুল মুমিনিনদের সম্পর্কে নোংরা ও কুৎসিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। সাহাবিদের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটানো হয়েছে। যুদ্ধ বা জেহাদ সম্পর্কে বলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের নোংরা কথা।
এমন সব শব্দমালা এতে ব্যবহার করা হয়েছে যা খুবই আপত্তিকর। নবী মুহাম্মাদ সা: থেকে শুরু করে ইসলামের বিধিবিধান, ধর্মীয় আচার, পবিত্রতার বিভিন্ন প্রসঙ্গ ‘নূরানী চাপা’তে ওয়াজরীতি অনুসরণ করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যৌনতাকে এখানে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে হাজির করা হয়েছে।
নূরানী চাপা সমগ্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এমন কুরুচির মন্তব্যধর্মী লেখা ইসলামের দুশমনের পক্ষেও সম্ভব নয়। গতকাল ফেসবুকে একজন লিখেছেন ‘রাজীব জামায়াত-শিবিরের শত্রু নয়, সে ইসলামের শত্রু’। তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন অনেকে।
শাহবাগে যারা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন ‘থাবা বাবা’ ওরফে রাজীবকে নিয়ে তাদের অনেকের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে সেটি সরাসরি কেউ প্রকাশ করতে পারছেন না।
তাদের একজন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আপনারা লিখবেন ঠিকই কিন্তু আমার নাম উল্লেখ করলে আমিও রাজাকার হয়ে যাবো। এখানে এরা রাজীবকে নিয়ে যা করছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘ধর্ম কারো সম্পত্তি নয়। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু রাজীব ইসলামকে আক্রমণ করে যেসব লেখা লিখেছে, তা পড়ে আমার কান গরম হয়ে গেছে। এসব কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এখানে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তার জানাজা পড়েছেন। আমি নিশ্চিত তার এসব লেখা পড়লে কেউ তার জানাজা পড়তেন না।’
জানাজা নিয়ে নিন্দার ঝড় : নামাজে জানাজায় উপস্থিত একজন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সূর্যাস্তের সময় নামাজকে হারাম করা হয়েছে। কিন্তু রাজীবের জানাজা হয়েছে ঠিক তখনই। জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণের বিধান না থাকলেও পুরুষদের কাতারে তাদের দাঁড়িয়ে জানাজা পড়তে দেখা যায়। চত্বরে অবস্থানকারীদের একটি বড় অংশই অজু করারও সুযোগ পাননি। জানাজায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নিলেও এর পরপরই মাগরিবের আজান হয়। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই মাগরিবের নামাজে না গিয়ে গানবাজনা ও স্লোগানে মাতোয়ারা হয়ে পড়েন। জানাজার আগে ও পরে দোয়াদুরুদ পড়ার বিধান থাকলেও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে জানাজার নামাজ শুরু ও শেষ হয়েছে। জানাজা চার তাকবিরের সাথে হওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে তিন তাকবির। জানাজার আগে দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বক্তব্য।’ কিন্তু এসব নিয়ে কথা বলা এখন নিরাপদ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের দুজন মন্ত্রী বলেছেন রাজীব নবপ্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রথম শহীদ। প্রধানমন্ত্রী তার বাসায় গিয়েছেন। আসলে এখানে একটা রাজনীতি হচ্ছে। এই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা আমরা অব্যাহতভাবে করেও সফল হতে পারিনি।
রাজীবের জানাজা কেন হবে?- এমন প্রশ্ন ছিল অনেকের মধ্যে। সামহয়্যারইন ব্লগে এ নিয়ে অনেকে সরাসরি প্রশ্ন করেন। এমনকি রাজীবকে নিয়ে সামু নিজস্ব দৃষ্টি আকর্ষণ ব্লগেও এ নিয়ে ভিন্ন মত দিয়েছেন অনেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কারণে জানাজা হয়েছে।
ডিজিটাল মুলুকে বিতর্ক : ডিজিটাল দুনিয়ায় দুই রকমের বিতর্ক হচ্ছে। প্রথম বিতর্ক তিনি ধর্মকে অবমাননা করেছেন। দ্বিতীয় বিতর্ক- তার নাম করে কেউ এসব লিখেছেন।
তবে তার খুনকে কোনো পক্ষই সমর্থন দিচ্ছে না। কিন্তু ডিজিটাল মুলুকে ইসলাম, নবী মুহাম্মাদ সা: এবং মুসলমানদের ধর্মীয় রীতিনীতিকে কটাক্ষ করা শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। তার ব্লগ পেজ http:// nuranichapa.wordpress.com/ author/thabababa/। সেখানে থাবা বাবা ‘হেরা গুহা’ ‘ইফতারী ও খুর্মা খাজুর’, ‘সিয়াম সাধনার ইতিবৃত্ত’, ‘ঈদ মোবারক আর ঈদের জামায়াতের হিস্টুরি’, ‘ঢিলা ও কুলুখ’, ‘সিজদা’ এ রকম বিভিন্ন শিরোনামে লিখেছেন। এখানে মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসকে কটাক্ষ করা হয়েছে এমন সব শব্দমালায়, যা উল্লেখ করার মতো না।
নূরানী চাপা সমগ্র নামে এসব অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। ‘থাবা বাবা’ এখানে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সা:-কে ‘মোহাম্মক’ (নাউজুবিল্লাহ) হিসেবে উল্লেখ করেন। ফেসবুকে এবং শাহবাগে অনেকে বলছেন, থাবা বাবাকে হত্যা করা হয়েছে ধর্মীয় কারণে। এর জবাব দিয়ে ফেসবুকে ‘মজা-লস’ নামে একটি পেজে বলা হয়েছে, যদি তাই করা হতো তাহলে এটাকে আরো আগেই অনেক বড় ইস্যু করে ধর্মভিত্তিক দলগুলো রাজনীতি করতে পারত। এই পেজে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত থাবা বাবা এ ধরনের নিচু মনোবৃত্তির লেখা চালিয়ে যান।
থাবা বাবা ফেসবুকের টাইম লাইন থেকে এ তথ্য নিয়েছেন উল্লেখ করে ‘মজা লস’-এর লেখক বলছেন, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে ফেক আইডিতে এটা তৈয়ার করা হয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ফেসবুকে তার যে পেজ ও আইডি রয়েছে, তার সবই একই ই-মেইল থেকে খোলা। অতএব ফেসবুক আইডি ঠিক আছে বলে শুক্রবার রাতে থাবা বাবা খুন হওয়ার পর বলা হয়েছে। সে হিসেবে পেজও সঠিক। এখানে ফেক কোনো আইডি নয়। এটি রিয়াল আইডি।
ঘটনার পর এ নিয়ে অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করেন। একজন বলেছেন, থাবা বাবার জানাজা দিয়ে তার আত্মাকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। তিনি যাতে বিশ্বাস করেন না, যে নবীকে তিনি কটাক্ষ করেন, যে সৃষ্টিকর্তাকে তিনি অবিশ্বাস করেন, তার নামে তাকে জানাজা দেয়া বা সৎকার করা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। তিনি বেঁচে থাকলে এ ‘ভণ্ডামি’র জবাব দিতেন।
একজন বলছেন, ফেসবুক আইডিতে নিজেকে স্পষ্ট নাস্তিক উল্লেখ করা একজন ব্লগার কাল শাহবাগ সমাবেশে থাবা বাবার জানাজার পক্ষে সাফাই গাইলেন। এটা কেমন যেন হয়ে গেল।
থাবা বাবা কেবল ‘আমার’ ব্লগে লিখতেন তা নয়। তিনি ‘সামহয়্যারইন’ ব্লগেও লিখতেন। সেখানেও তিনি মুসলামনদের ধর্মবিশ্বাসকে আক্রমণ করেছেন।
থাবা বাবা সামহয়্যারইন ব্লগে লিখতেন ‘আমার যতো কথা’ নামে। সামুতে তার হত্যার খবরটি টপে দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রতি মুহূর্তের আপডেট দেয়া হচ্ছে। তবে তার জানাজা করা-না-করা নিয়ে এতে বিভিন্ন জন মত দিয়েছেন। থাবা বাবাকে নিয়ে বিতর্ক চলছে ফেসবুকের https://www.facebook.com/ moja.losss/posts/ 381302265300288 এখানে।
কেবল এখানেই শেষ নয়, ‘ধর্মকারি ডট কম’ নামে আরেকটি ব্লগ সাইটেও লিখতেন রাজীব ওরফে থাবা বাবা। নাস্তিকদের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত ওই ব্লগের স্ক্রলে ভাসছে আল্লাহকে অবামনা করে বিভিন্ন লেখা।
বলা হচ্ছে, ‘তিনি সর্বব্যাপী, তিনি জলাশয়ে আছেন… (লেখার যোগ্য নয়) ও আছেন। এ রকম নোংরা একটি সাইট এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। এ সাইটটি ব্লক করেনি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। এ সাইটেও থাবা বাবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ব্যানার ঝোলানো হয়েছে। সেখানকার অনেক ব্লগার থাবা বাবার মতো আল্লাহ ও নবী মুহাম্মাদ সা:কে আক্রমণ করে বিভিন্ন ব্লগ লিখছেন।
http:// www.dailynayadiganta.com/ new/?p=120194
— with ট্রুথ ফাইটার, Saiful Islam, Adorsher Songram and 40 others.রাসূল (সা:), নবী সহধর্মিণী ও সাহাবাদের সম্পর্কে জঘন্য কল্পকাহিনী
নিহত ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শুভ ওরফে ‘থাবা বাবা’র ইসলামবিরোধী অপপ্রচারে দেশজুড়ে উঠেছে নিন্দা ও ধিক্কারের ঝড়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন, মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:, পবিত্র কুরআন, ইসলাম ধর্ম ও ইসলামের রীতিনীতি নিয়ে যেসব মিথ্যা, বানোয়াট, অশ্লীল ও উদ্ভট কল্পকাহিনী রাজীব তার ব্লগে তুলে ধরে দীর্ঘ দিন থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করার যে অপচেষ্টা চালিয়ে আসছিল, গতকাল তা সাইবার মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়ে যায়। আর এর মধ্য দিয়ে সব রাজনৈতিক মতধারায় বিশ্বাসী প্রতিটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হেনেছে। শুধু তা-ই নয়, অপপ্রচারের জন্য বিশ্বব্যাপী ধিকৃত সালমান রুশদীকেও হার মানিয়েছে রাজীব। এত বড় দুঃসাহস কেউ কখনো করেনি।
ফলে এক দিন আগেও যে রাজীব তরুণ প্রজন্ম ও সরকারের কাছে ‘প্রজন্মের প্রথম শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, মুহূর্তের মধ্যেই জীবদ্দশায় কৃতকর্মের ফলস্বরূপ সে পেতে শুরু করেছে দেশবাসীসহ বিশ্বের মুসলমানদের ধিক্কার ও ঘৃণা। রাজীবের ব্লগের বক্তব্য প্রকাশ পেয়ে যাওয়ায় সারা দেশে প্রতিটি মুসলমান নারী-পুরুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভের আগুন। শুধু তা-ই নয়, দাবি উঠতে শুরু করেছেÑ যারা আল্লাহ, রাসূল সা: ও ইসলামের বিরুদ্ধে নিকৃষ্টতম মন্তব্যকারী রাজীবকে ‘শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন, শাহবাগে নামাজে জানাজার নামে মায়াকান্না কাঁদলেন- তাদের বিচারের। এমনকি একজন নাস্তিকের নামাজে জানাজা, জানাজার প্রক্রিয়া ও অংশগ্রহণকারী নারী-পুরুষদের নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, শাহবাগ গণজাগরণ চত্বরে অবস্থানকারী ভদ্র মুসলিম পরিবারের সন্তানদের মাঝেও রাজীবের অতীত কৃতকর্মের খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশীরাও গতকাল সারা দিন ফোন ও ব্লগের মাধ্যমে রাজীবকে ধিক্কার ও ঘৃণা জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার রাতে মিরপুরে নিহত হন রাজীব। দুবৃত্তরা তাকে খুন করে। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও পুলিশ এ বিষয়ে খোলাসা করতে পারেনি। তবে শাহবাগ চত্বর থেকে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করা হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
থাবা বাবা তার ব্লগ পেজ ‘নূরানী চাপা সমগ্র’তে মহানবী মুহাম্মাদ সা:কে যে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তার জীবন সম্পর্কে এবং তাকে হেয় করে যে মিথ্যা কল্পকাহিনী রচনা করেছেন তাতে সাধারণ মানুষ খুবই আহত হয়েছেন। নবী সা:-এর নবুয়াতপ্রাপ্তির স্মৃতিবিজড়িত হেরা গুহা নিয়ে তার বিশ্লেষণ কোনোভাবেই শালীনতার মধ্যে পড়ে না। নবী মুহাম্মাদ সা:কে বরাবরই ‘মোহাম্মক’ (নাউজুবিল্লাহ) বলে সম্বোধন করেছেন থাবা বাবা।
মুসলমানের ধর্মীয় রীতিনীতি নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ও অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে। যেখানে মুসলমানেরা নিজেদের পরিশুদ্ধ করার জন্য এক মাস সিয়াম সাধনা করেন; সাধনার পর যে ঈদ আসে সেটিকে কটাক্ষ করে যৌনতার প্রসঙ্গ টেনে বিদ্রুপ করা হয়েছে- যা প্রকাশযোগ্য নয় বলে মনে করে নয়া দিগন্ত।
নবী সা:-এর স্ত্রী উম্মুল মুমিনিনদের সম্পর্কে নোংরা ও কুৎসিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। সাহাবিদের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটানো হয়েছে। যুদ্ধ বা জেহাদ সম্পর্কে বলা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের নোংরা কথা।
এমন সব শব্দমালা এতে ব্যবহার করা হয়েছে যা খুবই আপত্তিকর। নবী মুহাম্মাদ সা: থেকে শুরু করে ইসলামের বিধিবিধান, ধর্মীয় আচার, পবিত্রতার বিভিন্ন প্রসঙ্গ ‘নূরানী চাপা’তে ওয়াজরীতি অনুসরণ করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যৌনতাকে এখানে প্রধান আকর্ষণ হিসেবে হাজির করা হয়েছে।
নূরানী চাপা সমগ্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এমন কুরুচির মন্তব্যধর্মী লেখা ইসলামের দুশমনের পক্ষেও সম্ভব নয়। গতকাল ফেসবুকে একজন লিখেছেন ‘রাজীব জামায়াত-শিবিরের শত্রু নয়, সে ইসলামের শত্রু’। তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন অনেকে।
শাহবাগে যারা আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন ‘থাবা বাবা’ ওরফে রাজীবকে নিয়ে তাদের অনেকের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। তবে সেটি সরাসরি কেউ প্রকাশ করতে পারছেন না।
তাদের একজন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আপনারা লিখবেন ঠিকই কিন্তু আমার নাম উল্লেখ করলে আমিও রাজাকার হয়ে যাবো। এখানে এরা রাজীবকে নিয়ে যা করছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।’
তিনি বলেন, ‘ধর্ম কারো সম্পত্তি নয়। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে আন্দোলন রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু রাজীব ইসলামকে আক্রমণ করে যেসব লেখা লিখেছে, তা পড়ে আমার কান গরম হয়ে গেছে। এসব কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না। এখানে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তার জানাজা পড়েছেন। আমি নিশ্চিত তার এসব লেখা পড়লে কেউ তার জানাজা পড়তেন না।’
জানাজা নিয়ে নিন্দার ঝড় : নামাজে জানাজায় উপস্থিত একজন নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সূর্যাস্তের সময় নামাজকে হারাম করা হয়েছে। কিন্তু রাজীবের জানাজা হয়েছে ঠিক তখনই। জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণের বিধান না থাকলেও পুরুষদের কাতারে তাদের দাঁড়িয়ে জানাজা পড়তে দেখা যায়। চত্বরে অবস্থানকারীদের একটি বড় অংশই অজু করারও সুযোগ পাননি। জানাজায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নিলেও এর পরপরই মাগরিবের আজান হয়। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই মাগরিবের নামাজে না গিয়ে গানবাজনা ও স্লোগানে মাতোয়ারা হয়ে পড়েন। জানাজার আগে ও পরে দোয়াদুরুদ পড়ার বিধান থাকলেও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে জানাজার নামাজ শুরু ও শেষ হয়েছে। জানাজা চার তাকবিরের সাথে হওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে তিন তাকবির। জানাজার আগে দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বক্তব্য।’ কিন্তু এসব নিয়ে কথা বলা এখন নিরাপদ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের দুজন মন্ত্রী বলেছেন রাজীব নবপ্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে প্রথম শহীদ। প্রধানমন্ত্রী তার বাসায় গিয়েছেন। আসলে এখানে একটা রাজনীতি হচ্ছে। এই রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা আমরা অব্যাহতভাবে করেও সফল হতে পারিনি।
রাজীবের জানাজা কেন হবে?- এমন প্রশ্ন ছিল অনেকের মধ্যে। সামহয়্যারইন ব্লগে এ নিয়ে অনেকে সরাসরি প্রশ্ন করেন। এমনকি রাজীবকে নিয়ে সামু নিজস্ব দৃষ্টি আকর্ষণ ব্লগেও এ নিয়ে ভিন্ন মত দিয়েছেন অনেকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কারণে জানাজা হয়েছে।
ডিজিটাল মুলুকে বিতর্ক : ডিজিটাল দুনিয়ায় দুই রকমের বিতর্ক হচ্ছে। প্রথম বিতর্ক তিনি ধর্মকে অবমাননা করেছেন। দ্বিতীয় বিতর্ক- তার নাম করে কেউ এসব লিখেছেন।
তবে তার খুনকে কোনো পক্ষই সমর্থন দিচ্ছে না। কিন্তু ডিজিটাল মুলুকে ইসলাম, নবী মুহাম্মাদ সা: এবং মুসলমানদের ধর্মীয় রীতিনীতিকে কটাক্ষ করা শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। তার ব্লগ পেজ http://
নূরানী চাপা সমগ্র নামে এসব অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। ‘থাবা বাবা’ এখানে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ সা:-কে ‘মোহাম্মক’ (নাউজুবিল্লাহ) হিসেবে উল্লেখ করেন। ফেসবুকে এবং শাহবাগে অনেকে বলছেন, থাবা বাবাকে হত্যা করা হয়েছে ধর্মীয় কারণে। এর জবাব দিয়ে ফেসবুকে ‘মজা-লস’ নামে একটি পেজে বলা হয়েছে, যদি তাই করা হতো তাহলে এটাকে আরো আগেই অনেক বড় ইস্যু করে ধর্মভিত্তিক দলগুলো রাজনীতি করতে পারত। এই পেজে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত থাবা বাবা এ ধরনের নিচু মনোবৃত্তির লেখা চালিয়ে যান।
থাবা বাবা ফেসবুকের টাইম লাইন থেকে এ তথ্য নিয়েছেন উল্লেখ করে ‘মজা লস’-এর লেখক বলছেন, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে ফেক আইডিতে এটা তৈয়ার করা হয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ফেসবুকে তার যে পেজ ও আইডি রয়েছে, তার সবই একই ই-মেইল থেকে খোলা। অতএব ফেসবুক আইডি ঠিক আছে বলে শুক্রবার রাতে থাবা বাবা খুন হওয়ার পর বলা হয়েছে। সে হিসেবে পেজও সঠিক। এখানে ফেক কোনো আইডি নয়। এটি রিয়াল আইডি।
ঘটনার পর এ নিয়ে অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করেন। একজন বলেছেন, থাবা বাবার জানাজা দিয়ে তার আত্মাকে কষ্ট দেয়া হয়েছে। তিনি যাতে বিশ্বাস করেন না, যে নবীকে তিনি কটাক্ষ করেন, যে সৃষ্টিকর্তাকে তিনি অবিশ্বাস করেন, তার নামে তাকে জানাজা দেয়া বা সৎকার করা কোনোভাবেই উচিত হয়নি। তিনি বেঁচে থাকলে এ ‘ভণ্ডামি’র জবাব দিতেন।
একজন বলছেন, ফেসবুক আইডিতে নিজেকে স্পষ্ট নাস্তিক উল্লেখ করা একজন ব্লগার কাল শাহবাগ সমাবেশে থাবা বাবার জানাজার পক্ষে সাফাই গাইলেন। এটা কেমন যেন হয়ে গেল।
থাবা বাবা কেবল ‘আমার’ ব্লগে লিখতেন তা নয়। তিনি ‘সামহয়্যারইন’ ব্লগেও লিখতেন। সেখানেও তিনি মুসলামনদের ধর্মবিশ্বাসকে আক্রমণ করেছেন।
থাবা বাবা সামহয়্যারইন ব্লগে লিখতেন ‘আমার যতো কথা’ নামে। সামুতে তার হত্যার খবরটি টপে দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রতি মুহূর্তের আপডেট দেয়া হচ্ছে। তবে তার জানাজা করা-না-করা নিয়ে এতে বিভিন্ন জন মত দিয়েছেন। থাবা বাবাকে নিয়ে বিতর্ক চলছে ফেসবুকের https://www.facebook.com/
কেবল এখানেই শেষ নয়, ‘ধর্মকারি ডট কম’ নামে আরেকটি ব্লগ সাইটেও লিখতেন রাজীব ওরফে থাবা বাবা। নাস্তিকদের আড্ডাখানা হিসেবে পরিচিত ওই ব্লগের স্ক্রলে ভাসছে আল্লাহকে অবামনা করে বিভিন্ন লেখা।
বলা হচ্ছে, ‘তিনি সর্বব্যাপী, তিনি জলাশয়ে আছেন… (লেখার যোগ্য নয়) ও আছেন। এ রকম নোংরা একটি সাইট এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। এ সাইটটি ব্লক করেনি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। এ সাইটেও থাবা বাবার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ব্যানার ঝোলানো হয়েছে। সেখানকার অনেক ব্লগার থাবা বাবার মতো আল্লাহ ও নবী মুহাম্মাদ সা:কে আক্রমণ করে বিভিন্ন ব্লগ লিখছেন।
http://
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন