বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৩

কে দিলো নূপুর তোকে

কে দিলো নূপুর তোকে . . .

এই ছবিটি কার? হয়ত আমার-আপনার বোনের অথবা আমাদের কারোরই কেউ না! কিন্তু আপনি ছবিটির দিকে তাকান, পায়ে নূপুর বাধা! তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে না শরীরের অন্য কোনো অংশও। শুধু তার পায়ে বাঁধা আছে একটা নূপুর। পায়ের আঙুলে রক্ত মাখা। সে পা তাক করে আছে আমাদের দিকে! কার দিকে?

এটা নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুন, এ পা আমার দিকে, আপনার দিকে, রাষ্ট্রযন্ত্রের দিকে!
এটা তার প্রতিবাদ!

ওরা আটকা পড়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের এক ক্ষমতাশীল সুবিধাভোগীর রানা প্লাজায়। গত পরশু দিনও তিনি বেঁচে ছিলেন। কাল আটকা পড়ার পর কখন তিনি মারা গেছেন, সেটা আমরা কেউই জানি না। হয়ত মারা যাওয়ার আগে তার এ প্রতিবাদ! তার এ প্রতিবাদ আমার, আপনার আর রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতি!

কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র কি তার এ প্রতিবাদ আমলে নেবে? আমরা দেখছি, রানা প্লাজার সামনে বুধবার থেকে আহত-নিহত স্বজনদের আহাজারি!

ভাই যেমন বোনকে খুঁজছেন। বোন খুঁজছেন তার ভাইকে। বাবার খোঁজে, ছেলে-মেয়ের খোঁজে মা।

আমরা যারা মিডিয়ায় কাজ করি, তারা বুধবার থেকে সেখানে অবস্থান নিয়েছি। হয়ত আরও কিছু সময় আমরা থাকবো। আহত-নিহতদের স্বজনদের মুখের কথা বের করবো। ভবনের মালিকের বিচার চাইবো। কিন্তু সেটা কতদিন, প্রশ্নটা সেখানেই!

আমরা দেখেছি, তাজরীনের মালিককে পাশে বসিয়ে বিজিএমইএর কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তারপর আর তাজরীনের মালিকের খবর নেই। আর রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা পৌরসভা যুবলীগের সভাপতি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য তোহিদ জং মুরাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত।

সেখানে কি সোহেল রানার আদৌ বিচার হবে? আমরা কি পারবো তাকে বিচারের মুখোমুখি করতে?

তাই, নাম না জানা ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপাপড়া এই কিশোরী আমাদের দেখিয়ে দিলো- “তোমরা যা পারছো না আমি তা করে গেলাম!” এ যেন সেই রবি ঠাকুরের গল্পের মতোই ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই’।

তেমনি এই কিশোরীর পা দেখে মনে হয়, এ এক মানবিক প্রতিবাদ, জীবনের জন্য অসহায়ের দ্রোহ!!

জাকিয়া আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন